নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজবাড়ীতে টমেটোতে পচন ধরেছে। ফলন ভালো হলেও টমেটোতে পচনের কারণে উৎপাদন কমে গেছে। অতিবৃষ্টির কারণে মাটি ভেজা থাকায় পচন ধরেছে। এতে করে লোকসানের আশঙ্কা করছেন টমেটো চাষীরা।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরো রাজবাড়ী জেলায়ই বিচ্ছিন্নভাবে টমেটোর আবাদ করা হয়। তবে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় টমেটো চাষের জন্য খুব উপযোগি। এতে করে তীরবর্তী এলাকায় টমেটোর চাষাবাদ খুব বেশি হয়। রাজবাড়ীতে সাধারণত বিউটিফুল, বিপুল প্লাস, বিগল, মিন্টু সুপার নামের হাইব্রিড জাতের টমেটো বেশি আবাদ করা হয়। জেলায় মোট ৭৯৫ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পাড়ে বিস্তৃত এলাকায় টমেটো চাষাবাদ করা হয়েছে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। নদী পাড়ের খেতগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। টমেটো পাকতে শুরু করেছে। নারী-পুরুষেরা খেত থেকে টমেটো তুলছে। তোলার পর পচা টমেটো আলাদা করে রেখে দেওয়া হচ্ছে। ভালো টমেটো বাজারে নেওয়ার জন্য প্যাকেটজাত করা হচ্ছে।
টমেটো চাষী রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের গোপালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ডলি বেগম বলেন, ছয় বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। তিন বিঘা জমি আমাদের। আর তিন বিঘা জমি ইজারা নেওয়া। বিঘা প্রতি বাৎসরিক ৩০ হাজার টাকা জমির মালিককে দিতে হয়। টমেটোর ফলন ভালোই হয়ে ছিল। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অসময়ে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে মাটি ভিজে গেছে। এতে করে ভেজা মাটিতে টমেটোর পচন ধরেছে। পাইকারী ৩০ টাকা কেজি দামে টমেটো বিক্রি করা হচ্ছে। এরপরেও বর্তমান দামে বেচতে পারলে লাভ হবে। আর দাম কমে গেলে আমাদের লোকসান হবে।
উড়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। কিন্তু ঘুণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট আমাদের অনেক ক্ষতি করে গেছে। বৃষ্টির কারণে টমেটো পচে যাচ্ছে। আর একটি টমেটো পচে গেলে ঝোপায় থাকায় অন্য টমেটো পচে যায়। আবার পচা টমেটো খেত থেকে তুলে ভালো টমেটোর সঙ্গে রাখলেও সেগুলো পচে যায়। একারণে ফলন অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি পচা টমেটো ফেলে দেওয়ার জন্য আলাদা শ্রম দিতে হচ্ছে। আমরা খেত থেকে টমেটো তুলে তা বাজারে বিক্রি করি। টমেটো পাকানোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করি না।
টমেটো চাষী আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, চার সন্তান ও স্বামী নিয়ে সংসার। মেয়ে তিনটি বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। ছেলে দর্জির কাজ করে। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজন চাষাবাদ করি। সকালে খাওয়ার পরে টমেটো তুলতে আসি। দুই বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেছিলাম। কিন্তু পানি জমে এক বিঘার টমেটো গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এই বিঘাতেও টমেটো পচতে শুরু করেছে। এসব নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
আবদুর রশিদ নামে আরেক চাষী বলেন, ৩০ হাজার টাকা করে বিঘা প্রতি ইজারা দিতে হয়। এরপর সার, বীজ, বিষ প্রভৃতির দাম বেড়ে গেছে। সরকার থেকেও কোনো সহায়তা পাই না। এখন বৃষ্টির কারণে টমেটো পচে যাচ্ছে। এবার খরচের টাকা তোলা হয়ে চিন্তায় আছি। হয়তোবা লোকসান হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহারউদ্দিন সেক বলেন, সদর উপজেলার উড়াকান্দা, গোপালবাড়ির চর এলাকায় প্রচুর টমেটো চাষ করা হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে অতিবৃষ্টি হওয়ায় অনেক খেতে পানি জমে। পানি নিস্কাশন করা হয়েছে। তবে মাটি ভেজা থাকায় পচন লাগতে পারে। আমরা বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিচ্ছি। স্প্রে করলে পচনরোধ করা সম্ভব।
Leave a Reply