নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজবাড়ীর চারটি উপজেলার ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পদ্মা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। কোথায়ও কোথায়ও শ্রেণিকক্ষেও পানি ঢুকেছে। এতে করে বিদ্যালয়ে শ্রেণিপাঠ কার্যক্রম পরিচালনা করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক রয়েছে মোট ৪৮২টি। এরমধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৩৫টি, পাংশায় ১২১টি, বালিয়াকান্দিতে ৯৯টি, কালুখালী উপজেলায় ৭৬টি এবং গোয়ালন্দ উপজেলায় ৫১টি। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে মোট ২১টি বিদ্যালয়ে পদ্মার পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত বিদ্যালয়ের মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চারটি, পাংশা উপজেলায় তিনটি, গোয়ালন্দ উপজেলায় নয়টি এবং কালুখালী উপজেলায় পাঁচটি।
সোমবার সরেজমিনে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দুটি। আধাপাকা একটি ভবনের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি একদম পদ্মার পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যালয় মাঠে পানি থৈ থৈ করছে। বিদ্যালয়ের বারান্দায় শিশুরা খেলাধূলা করছে। বরাট ইউনিয়নের কুঠুরাকান্দি সরকারি বিদ্যালয়ের পানি পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। শিশুরা পানির মধ্যে খেলাধূলা করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন। গোপালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্র। বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি।
অভিভাবকেরা বলেন, মহামারী করোনার কারনে বিদ্যালয় অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ছেলেমেয়েরা অলস হয়ে বসে রয়েছে। দীর্ঘদিন পরে আবারো স্কুল কলেজ খোলা হচ্ছে। এটি খুব ভালো খবর। কিন্তু পদ্মার পাড়ে বিদ্যালয়গুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। মাঠে পানি। মানি মাড়িয়ে যাওয়া ছাড়া ক্লাসে যাওয়া যাবে না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেও নিয়ে দুর্ঘটনায় আশঙ্কা রয়েছে।
সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের কুঠুরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কুমার দাস বলেন, আমাদেও বিদ্যালয়টি পদ্মার পাড় ঘেঁষে। বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে আমরা শ্রেণিকক্ষ, বেঞ্চ, চেয়ার টেবিল সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিস্কার করেছি। জীবানুনাশক দিয়েছি। আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। আজ পানি কিছুটা কমেছে। আশা করছি ১২ সেপ্টেম্বর পানি নেমে যাবে। নইলে শিক্ষার্থীদের পানি পার হয়ে ক্লাসে যেতে হবে। তাহলে হয়তোবা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস স্থগিত রাখতে পারি।
গোপালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি। আপাতত বিদ্যালয়ে পানি মাড়িয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে আমরা বিদ্যালয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। এই এলাকায় ১৫-২০ দিন ধরে পানি এসেছে।
কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর আ. কুদ্দুস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আবদুল কুদ্দুস বলেন, কয়েক দিন আগে এটিও স্যার এসেছিলেন। আমার স্কুলের মাঠে কোথাও বুক পর্যন্ত পানি। কোথায়ও কোমড় পর্যন্ত পানি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন কোরেমী বলেন, জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা ব্যতিত অন্য চারটি উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নের পানি প্রবেশ করেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে বিদ্যালয়ে সংখ্যা ২১টি। তবে আজ পদ্মার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আশা করছি ক্লাস শুরুর আগে পদ্মার পানি কমে যাবে। কারণ আমাদেও হাতে এখনো অন্তত পাঁচদিন সময় আছে। যদি পানি না কমে তাহলে শুধুমাত্র চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিপাঠ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ছোটদের বাড়িতে থাকতে বলবো। তবে পানি থাকলে বোধহয় সরকারি নতুন নির্দেশনা আসবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুর্বণা রানী সাহা বলেন, জেলাতে কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ্মার পানি প্রবেশ করেছে তা জানা নেই। বিদ্যালয় খোলা নিয়ে কোনো সরকারি পত্র এখনো আমরা হাতে পাইনি। একারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি থাকলে করণীয় কি হবে তা বলতে পারছি না। তবে সরকারিপত্র পেলে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply