নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ী ইউনিয়নের পূর্বফুল কাউন্নার গ্রামে একটি শিশুকে ছয় বছর ধরে রাখা হয়েছে খাঁচায়। আর্থিক সংকটের কারণে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না পরিবারটি। এতে করে বিপাকে পড়েছে পরিবারটি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভূক্তভোগি শিশুটির নাম শীলা দাস (৯)। শীলার দুই ভাই এক বোন। শীলা মেঝো। বড় ভাই চন্দন কুমার শীল স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আরেক ছোট ভাইয়ের বয়স দুই বছল। বাবা একটি সেলুনে কাজ করে। সে পায়ে হাঁটতে পারে না। হামাগুড়ি দেয়। শিশুটির তিন বছরের দিকে শারীরিক সমস্যার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারে। সে হাঁটতে পারতো না। হামাগুড়ি দেয়। কাউকে পেলে কামর দেয়। মারধর করে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ভাবে কোনো উন্নতি হয়নি। মাঝেমধ্যে বাইরে বের করা হয়। চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গেছে একাধিকবার। আবার হামাগুরি দিয়ে বাইরে চলে যায়। সামনে কাউকে পেলে কামড়ায় ও মারধর করে। একারণে বারান্দায় একটি খাঁচা তৈরি করে তাকে আটকে রাখা হয়। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষায় সবসময়ই খাঁচার মধ্যে থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোনাপুর বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে শীলাদের বাড়ি। টিনের ঘর। ঘরের প্রাচীরও টিন দিয়ে দেওয়া। মেঝে কাঁচা। ঘরের সামনে কাঁচা মাটির বারান্দা। বারান্দার এক কোণে দুইপাশে প্লাটিকের মোটা জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানে শিশুটি বসে আছে। কখনো দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আর মাঝে মাঝে ওই ওই শব্দ করছে। খাঁচার পাশেরই রান্না ঘরে শিশুটির মা চন্দনা শীল রান্না করছে।
শিশুটির মা চন্দনা শীল বলেন, আমার মেয়েটির ব্রেইনে সমস্যা আছে। ভালো ভাবে চিকিৎসা সেবার জন্য ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে জানতে পারি, সে প্রতিবন্ধী। শিশুটি একা একা কিছুই করতে পারে না। ¯œান, খাওয়া-দাওয়া কিছুই নিজে করতে পারে না। সবকিছু আমাদের করে দিতে হয়। ছোটবেলা থেকে অনেকবার ভারতে নিয়ে গেছি। এখন আর হাতে তেমন টাকা-পয়সা নেই। প্রায় চার বছর তাকে আর ভারতে নেওয়া হয়না।
তিনি বলেন, ওর জামা-কাপর চেঞ্জ করার সময়ও কামড় দেয়। ওই দাদিও মাথায়ও জখম আছে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ের দাগ আছে। মাঝেমধ্যেই জখম করে ফেলে। এসময় ওষুধ খেয়ে ঘাঁ শুকাতে হয়। এমনকি নিজের শরীরেরও কামড়ে জখম করে। মাঝেমধ্যে খুব চিল্লাচিল্লি করে। সবমিলিয়ে আমরা খুব বিরক্ত।
শিশুটির ভাই চন্দন কুমার শীল জানায়, যখন খুব কান্নাকাটি কওে তখন বের করি। এখন আর কোলে নিয়ে হাঁটা যায় না। হুইল চেয়ারে নিয়ে যাই। কিন্তু খুব মাওে আর কামরায়। খুব অসহ্য লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুজ্জামান মাসুম বলেন, শিশুটির বাবা দরিদ্র। আর্থিকভাবে খুব দুর্বল। সামাজিক ভাবেও হেয়পন্ন। হয়তো বা যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে পারলে শিশুটি ভাবে ভাবে জীবনযাপন করতে পারতো। কিন্তু তাঁর বাবার সেই সামর্থ্য নেই। সরকার ও বিত্তশালীদেও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। একটি স্থায়ী ব্যবস্থা বা বড় অনুদান পেলে শিশুটির দেখভালের জন্য পরিবারের খুব ভালো হতো।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী শরীফুল ইসলাম বলেন, শিশুটির পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। আমি তাকে একটি ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। এয়াড়া যখন যে সহায়তা করা সম্ভব তা করি। কিন্তু ভাতার পরিমানও খুব বেশি না। শিশুটির চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। যা আমার পক্ষে সম্ভব না।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে শিশুটির ব্রেইনে সমস্যা। শিশুটির ব্রেইনের বিকাশ ঠিকমতো হয়নি। এবিষয়ে আমাদেও নিউরো বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা সেবা নিতে পারলে ভালো হতো। এবিষয়ে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি বা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সহায়তা পেতে পারে। এছাড়া খাঁচায় মধ্যে বারান্দায় থাকার বিষয়টি অমানবিক। সমাজসেবার অধিনে সেল্টারহোমে এধরণের শিশুদের থাকার ব্যবস্থা আছে।
Leave a Reply