শুক্রবার নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে গণিত ও বিজ্ঞান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘যাত্রা হোক শূন্য থেকে অসীমের পথে’ প্রতিপাদ্য সামনে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আর্যভট্ট গণিত পাঠশালার উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
সকাল ৮টা থেকেই বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সূর্যের দেখা পাওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের কলকাকলীতে মূখরিত হয় বিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস। এদের অনেকেই সঙ্গে নিয়ে এসেছে দেয়াল পত্রিকা। পত্রিকা মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে সাজিয়ে রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় উৎসবের উদ্বোধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। উদ্বোধন শেষে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরের খাবার ও নামাজের বিরতির পর বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চলতে থাকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর। রুবিকস প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তাদের সনদপত্র, মেডেল ও টিশার্ট দেওয়া হয়।
উদ্বোধন পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সূবর্ণা রানী সাহা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের প্রাক্তন অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
এতে বক্তব্য দেন কানাডার লেকহেড বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির উদ্দিন, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা খানম, প্রাক্তন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজা খানম, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অদ্বৈত কুমার দাস।
সংগঠনের সভাপতি মিনার মাহমুদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সুদীপ্ত মন্ডল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নীলয় সাহা, অনুছোঁয়া আপন ও সিফাত তানজিলা।
সূর্বণা রানী সাহা বলেন, অভিভাবকবৃন্দকে বলবো, আপনার জীবনের অর্পূনতার বোঝা আপনার সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দিবেন না। কেউ জিপিএ ৫ পায়নি বলে জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল। প্রতিবেশীর ছেলে জিপিএ ৫ পায়নি বলে আমার সম্মান ধূলি¯্রাত হয়ে গেল। এগুলো নেগেটিভ চিন্তা। এসব আপনার সন্তানের মধ্যে প্রসারিত না করেন। আপনারা জানেন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিল গেটস, আইনস্টাইন কেউ কিন্তু ভালো ছাত্র ছিলেন না। তবু কি তাঁরা জীবনে খ্যাতি পান নাই। খ্যাতি কিন্তু পেয়েছেন। আমাদের এপিজে আবুল কালাম আছেন। তিনি বিমান বাহিনীর পাইলট হতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করার কারনে পাইলট হতে পারেন নাই। তিনি কিন্তু বিশ^বিখ্যাত হয়েছেন। প্রতিটি মানুষের একটি স্বতন্ত্র মেধা আছে। সেই মেধা তাকে তার লক্ষ্যে পৌছে দিবে। যদি সে স্বপ্ন দেখতে জানে। এজন্য স্বপ্ন দেখতে হবে।
রেজাউল করিম বলেন, ২০০১ সালের ১৭ জুন প্রথম আলোর বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় ‘নিউরনের অনুরণন ’ নামে একটি প্রোগ্রাম শুরু হয়। সেই প্রোগ্রাম দিয়েই কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াডের শুরু। এরপর ২০০২ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের তিনটি স্থানে আঞ্চলিক গণিত উৎসবের আয়োজন করা হয়। তারমধ্যে ছিল ঢাকা, নারায়নগঞ্জ এবং আরেকটি রাজবাড়ী। বাংলাদেশের এতো বড় বড় শহর থাকতে সেটি রাজবাড়ীতে শুরু হয়েছিল। সেটি একটি বিরাট গৌরবের বিষয়।
তিনি বলেন, গণিত মানুষকে ভাবতে শেখায়। স্থবির হওয়া জীবনকে ধাক্কা দেয়। মানুষকে সামনের দিকে ধাবিত করে। এ ধরণের অনুষ্ঠান আশা জাগানিয়া।
অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে তুলে ধরবো রাজবাড়ী থেকে। কথাটা বলা সহজ। কাজ কিন্তু অতো সহজ না। কিন্তু প্রচুর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকলে এটা করা সম্ভব। সতেজ নমে আমাদের এক ছাত্র ছিল তার বাড়ি কুমিল্লায়। সে তখন ক্লাস এইটে পড়তো। তখন আমি পেপারে প্রচুর লিখতাম। উৎসাহ দেওয়ার জন্য লিখতাম। মাইক্রোসফট নিয়ে লিখতাম। সতেজ তখন ভাবলো সে মাইক্রোসফট নিয়ে পড়বে। তখন এই শব্দটি তেমন জনপ্রিয় ছিল না। তখন সে প্রতিজ্ঞা করে। এর ১০বছর পরে সে মাইক্রোসফটে চাকুরি পেয়েছে। তবে একটি আর্টিকেল পড়ে কাজ শুরু করায় তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
ড. অধ্যাপক নাসির উদ্দিন বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না। আমি বুয়েটে ভর্তি হওয়ার এক পরীক্ষায় ২০এর মধ্যে শূন্য পেয়েছিলাম। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তুমি একটা না পারলে আরেকটি পারবে। গণিত হোক বা ফিজিক্স হোক। মূখস্ত করলে চলবে না। সেটা হৃদয়াঙ্গম করতে হবে। প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই সবকিছুতে ভালো ফল করা যাবে।
Leave a Reply