আবদুল হালিম বাবু..
পদ্মা নদীতে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার বড়চর বেনীনগর গ্রামে শহররক্ষা বাঁধের পদ্মার তীররক্ষা ব্লক ধসে গিয়েছে। এছাড়া অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
ভাঙনরোধে পাউবোর উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভাঙনের হাত থেকে পদ্মার তীর সংরক্ষণের জন্য ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গস্খহণ করা হয়। এতে মোট ছয়টি প্যাকেজ। বড় প্যাকেজের আওতায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার তীর সংরক্ষণ ও খনন করা হয়। কাজের ব্যয় ৩০৪ কোটি টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড। কিন্তু কাজ করছে (কাজ কিনে নিয়েছে) মেসার্স দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল)। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল ২০২০ সালে। পরে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। গোদার বাজার এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকা সংস্কার কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়। ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি টাকা। পাঁচটি প্যাকেজে কাজ সম্পন্ন হয় চলতি বছরের ৩১ মে।
বড়চর বেনীনগর গ্রামের বাসিন্দা সালাম সরদার বলেন, আমি তিনবার বাড়ি পরিবর্তন করেছি। এই এলাকায় কয়েক দিন ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমার বাড়ি হুমকির মধ্যে পড়েছে। হয়তোবা এখানেও আর থাকা হবে না। তবে আমার আর যাওয়ার কোনো বিকল্প জায়গা-জমি নেই। নদী তীরে আগে থেকে বাঁধ দিলে আমাদের এই দুরবস্থা তৈরি হতো না। ভাঙন শুরু হওয়ার পর পারের উপরের দিকে বস্তা ফেলা হচ্ছে। আর নিচ থেকে ভেঙে যাচ্ছে।
আক্কাস আলী সরদার বলেন, বাপ দাদার প্রায় দেড়শ বিঘা জমি ছিল। সবই নদী গর্ভে। এখন আমরা কোনো ভাবে দিনযাপন করি। তেমন জমিজমা নেই। কয়েকদিন ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমার ফসলী চার-পাঁচ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করেছিলাম। নদী ভাঙনে আগে থেকে পদক্ষেপ নিলে আমাদের খুব ভালো হতো।
রহিমা বেগম বলেন, আগে আমাদের বাড়ি ছিল সিলিমপুরে। সেই বসত জমি এখন পদ্মার মধ্যে। এখানে ১৫ বছর ধরে বসবাস করছি। এই বাড়ি হুমকির মুখে। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আছে। কি করবো। স্বামীর আর্থিক অবস্থাও ভালো না। মাঠে কাজ করে। এবার নদীতে আগের মতো পানি বাড়েনি। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন দেখা দিলে বস্তা ফেলা হয়। এতে তেমন একটা কাজ না। নদী শুকনা থাকলে নিচ থেকে কাজ করে আসলে খুব ভালো হতো। গরীব মানুষগুলো বেঁচে যেতো।
রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফকীর শাহাদত হোসেন বলেন, রাজবাড়ীর প্রধান সমস্যার মধ্যে একটি নদী ভাঙন। প্রতিবছর অনেক ফসলী জমি, মানুষের বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙনের অন্যতম প্রধান অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন বলে সবাই মনে করে। অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধ করতে হবে। অথবা পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বালু তুলতে হবে। এছাড়া ভাঙনে নিংস্ব মানুষের জন্য পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল আমীন বলেন, নদীর তীর রক্ষায় একটি বড় প্রকল্প কিছুদিন আগে সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে কাজ বুঝে নেওয়া হয়েছে। পদ্মা নদীর পানির প্রবাহ সম্প্রতি বেড়েছে। এতে করে ডুবোচর তৈরি হওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু এলাকায় ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
Leave a Reply