নাহিদুল ইসলাম ফাহিম
শেষ রক্ষা হলো না বিদ্যালয়টির। পদ্মার করাল গ্রাসে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
শুক্রবার দুপুরে দেখা যায়, পানি কমতে শুরু করলেও পদ্মা আবার আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয় ভবনসহ পশ্চিমপাশের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিদ্যালয় ভবনটি পদ্মা নদীগর্ভে চলে গেছে। তাদের সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ। বিরক্ত। অসহায়ের মতো বসে আছে বিদ্যালয় মাঠে। কেউ দাঁড়িয়ে প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শেষ স্মৃতি মুঠোফোনে ধারণ করছেন।
চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সবদুল হোসেন বলেন, ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আগে খুব জনবসতিপূর্ণ এলাকা ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে অনেকেই বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র চলে যায়। সাংসদেও প্রচেষ্টায় নদী শাসনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে গেল। এই এলাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। কারণ আশেপাশে আর কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ভাঙনের খবর পেয়ে কিছু আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে পেরেছি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফিরোজা খাতুন ও সাদিয়া জানায়, আমাদেও বাড়ি বিদ্যালয়ের পাশে। আমরা এই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই মাঠে খেলাধুলা করি। স্কুলটি নদীতে চলে গেল। বিদ্যালয়ের মাঠও নদীতে চলে যাচ্ছে। এখন আর আমরা এই বিদ্যালয়ের পড়তে পারবো না। আমাদের এখানে আর কোনো স্কুল নেই। স্কুল এখান থেকে অনেক দুরে। আমাদের মন ভালো নেই।
বিদ্যালয় মাঠে আহাজারি করছিলেন রাশিদা বেগম। তিনি বলতে থাকেন, ‘উরে আল্লাহ রে। আমি কোথায় যাবো। আমি গরীব মানুষ। কোনো সন্তান নেই। আমি দুইবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন এখানে বাড়ি করেছি। বাড়িটি যেকোনো সময় ভেঙে যাবো। আমার আয় রোজগার করার মতো কেউ নেই। আমি কি করবো।’ এসময় কয়েকজন প্রতিবেশী তাকে সান্তনা দিতে থাকেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, কাজে অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা আগে থেকেই এখানে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বালুর বস্তা ফেলা শুরু হয়েছে। এলাকাটি রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বালুর বস্তা ফেলা শুরু হয়েছে।
Leave a Reply