নিজস্ব প্রতিবেদক.
রাজবাড়ীতে জনপ্রিয় হচ্ছে মৌসুমি পিঠার ব্যবসা। জনবহুল বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে এসব অস্থায়ী পিঠার দোকান। বিকেল হলেই দোকানে ভীড় করছে বিভিন্ন বয়সের ভোজন রসিক মানুষ। কেউ বসে আয়েশ করে পিঠা খাচ্ছে। কেউ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের রেলস্টেশনের ফুলতলা, পান্না চত্বর, বড়পুল, নতুন বাজার, সজ্জনকান্দার খবিরের দোকান, বেড়াডাঙ্গা, রেলগেঁসহ বিভিন্ন এলাকায় পিঠা বিক্রি করা হচ্ছে। অধিকাংশ দোকানে স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে কাজ করছে। কারও কারও ছেলেমেয়ে এসব কাজে সহায়তা করছে। কেউ কেউ সহকারী রেখেছেন। দুই ধরণের ক্রেতারা দোকানে ভীড় করছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ দোকানে তাৎক্ষণিক ভাবে এসেছে। আর কিছু ক্রেতা আগে থেকে অর্ডার দিয়ে এসেছে। তাঁরা এক সঙ্গে অনেক পিঠা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের পিঠা দিতেও হিমশিম খেতে হয়। কারণ সন্ধ্যার দিকে ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাঁরা সিরিয়াল দিয়ে পিঠা খাচ্ছে।
মতিউর মন্ডল বলেন, ‘তিনি পেশায় দিনমুজুর। মাঠে শ্রমিকের কাজ করেন। সন্ধ্যার পর রেলস্টেশন এলাকায় ঘুরতে আসেন। অল্প টাকায় মজার পিঠা পাওয়া যায়। এতে করে মজার সঙ্গে নাস্তা করা হয়ে যায়। দুই চার দিন পরপর তিনি পিঠা খেতে আসেন।’
কুষ্টিয়ার দৌলৎপুর এলাকার বাসিন্দা শ্রমিক এনামুল মিয়া। তিনি বলেন, আমার পচ্ছন্দ ভাপা পিঠা। এখানে কাজ করতে এসেছি। বছরের বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরে থাকি। সবকিছুর ব্যয় বেড়ে গেছে। একারণে বাড়িতে আর আগের মতো আয়োজন করে পিঠা তৈরি করা হয়না। সবমিলিয়ে মনের ক্ষুধা মেটানোর জন্য রেলস্টেশনে এসে পিঠা খাই। দামও কম। তেমন কোনো ঝামেলাও নাই।
বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল শেখ বলেন, আমি প্রায়ই পিঠা কিনতে আসি। তবে দোকানে বসে তেমন একটা খাওয়া হয়না। বাড়িতে নিয়ে যাই। বাড়ির রান্না করা তরকারি দিয়ে পিঠা খাই। বিশেষ করে যেদিন মাংশ রান্না করে সেদিন সন্ধ্যায় পিঠা কিনে নিয়ে যাই।
পিঠা দোকানী ফজের আলী মন্ডল বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে পিঠার ব্যবসা করি। বছরের অন্য সময় ফল বিক্রি করি। মূলত প্রায় চার মাস ধরে পিঠা বিক্রি করা হয়। প্রথমে চাল ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করা হয়। দুপুর ২টার দিকে সবকিছু নিয়ে দোকানে চলে আসি। এরপর থেকে পিঠা তৈরি করা শুরু করা হয়। প্রতিদিন দুই ধরণের পিঠা তৈরি করা হয়। চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে বিভিন্ন অনুসঙ্গ থাকে। এরমধ্যে হাঁসের মাংশ বা ভুড়ি। অপর দিকে বিভিন্ন ধরণের ভর্তা। সরিষা, কালোজিরা, শুটকি, চিংড়ি, টাকি ও মরিচ ভর্তা। ভর্তা পিঠার সঙ্গে ফ্রি দেওয়া হয়। আর হাঁসের মাংশ প্রতি প্লেট ১০০ টাকা। আধা প্লেট ৫০ টাকা। চিতই পিঠা প্রতিটি পাঁচ টাকা। আর ভাপা পিঠা দশ টাকা করে বিক্রি করা হয়।
তিনি বলেন, সাধারণত ক্রেতারা দোকানে বসে পিঠা খেয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বাড়ি নিয়ে যায়। বাড়ি নিয়ে মাংশ দিয়ে খাওয়া হয়। আবার কেউ দুধ-চিনি বা গুড় জ¦ালিয়ে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন খায়। ভালো হলে তারা আবার আসে। আমাকে অনেকে বাড়িতে নিয়ে যায় পিঠা তৈরি করে দেওয়ার জন্য। দোকানে সাধারণত রাত ৯টার দিকে বেচাকেনা সম্পন্ন হয়ে যায়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক শেখ মো. আবদুল হান্নান বলেন, রাস্তার পাশে অনেক পিঠার দোকান তৈরি হয়েছে। ক্রেতাও অনেক। পিঠার গুণাগুন ভালো। রাস্তা দিয়ে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন যাচ্ছে। পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। রাস্তার ধূলাবালি। স্বাস্থ্যগত চিন্তা করলে এসব কারণে পিঠা না খাওয়াই ভালো। তবে ধূলাবালিমুক্ত পরিবেশে তৈরি পিঠা খেলে সমস্যা নেই।
Leave a Reply