নিজস্ব প্রতিবেদক.
১৫ ফেব্রæয়ারি সকাল ১১টায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তিনবোনসহ মোট পাঁচ নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
সংবর্ধিত নারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন, রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা গ্রামের বড়পুল এলাকায় বাসিন্দা গীতা কর, ইরা কর ও ভক্তি রায়, ভবানীপুর গ্রামের মমতাজ পারভীন আখতার এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের অঞ্জু রায়। সংবর্ধিত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক, শাড়ি, শাল ও ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে শারীরিক অসুস্থতার কারণে মমতাজ বেগম অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর ভাইয়ের কাছে উপহার তুলে দেওয়া হয়।
রাজবাড়ীতে সভা সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহাবুর রহমান শেখ। এসময় জেলা প্রশাসক আবু কায়সান খান, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা ফকীর আবদুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. সালাউদ্দিন, রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক দিলীপ কুমার কর, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আজমীর হোসেন, রাজবাড়ী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা বাকাউল আবুল হাসেম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইরা কর বলেন, আমার দাদীর সামনেই তাঁর দুই সন্তানকে মেরে ফেলা হয়। আমরা ছিলাম ১১ বোন। বোনদের নিয়ে আমার বাবা গর্ববোধ করতেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন আমরা দেশে বিদেশে চাকুরি করবো। আমরা বাংলাদেশে জন্মেছি। ভারত যাবো কেন। তবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাবা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন।
তাঁরা পাশের ইউনিয়ন মূলঘর ইউনিয়নের এড়েন্দায় নানা বাড়ি। সেখানে বড় চার বোন আশ্রয় নেন। কয়েকদিন পর বিহারী ও বাঙালি রাজাকাররা মামা বাড়িতে লুটপাট চালায়। তাঁর বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ক্রমেই পরিবেশ অনিরাপদ হয়। আমরা রাতের আঁধারে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। জুন মাসের দিকে এক পরিচিতজনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য নাম লেখান। ভোর পাঁচটা থেকে পিটি করানো হতো। প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। কয়েক মাস পরে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেওয়া হয়। বিদায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাকে ১০ টাকা দিয়ে ছিলেন। অক্টোবর মাসে একজন অবাঙালিকে পথ প্রদর্শক হিসেবে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাওড়া স্টেশন থেকে আসাম যান। চলতে চলতে সীমান্তের করিমগঞ্জে পৌছান। সেখানে শরণার্থী ক্যাম্প ছিল। ক্যাম্পে ঢুকে মাখন সোম নামে একটি বাঙালি ছেলেকে দেখলেন। প্রচন্ড ক্ষুধা আর শীতে এমন অবস্থা কিছু বলার মত শক্তি ছিলনা। মাখন সোমের সহযোগিতায় কলকাতায় অবস্থানরত সাজেদা চৌধুরীর কাছে বিস্তারিত জানিয়ে টেলিগ্রাম করা হলো। পরে একটি গাড়িতে তাদের আগরতলা পাঠানো হয়। কুমিল্লা সীমান্তে বিশ্রামগঞ্জ নামক একটি জায়গায় মুক্তি বাহিনীদের জন্য ৪৮০ বেডের হাসপাতাল করা হয়। সেখানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম তাদের স্বাগত জানান। তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রæষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকার অনেক দিন আমাদের কর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে আমরা খুব খুঁশি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
Leave a Reply